Monday 29 June 2020

কোয়ারান্টিনে কাছে আসা

হঠাৎ করে একটা ছোট্ট ভাইরাস বৃহৎ পৃথিবীটাকে যখন স্তব্ধ করে দিলো, 
আটকে পড়ল সকলে নিজেদের ঘর নামক কারাগারে,
তখন সব থেমে যাওয়ার মাঝেই একটা নতুন গল্পের শুরু।

ঘরে আটকে থেকে সকলেরই কাজের ফাঁকে ফোনের সাথে ঘনিষ্ঠতা বেড়েছে,
লকডাউন তখনো শুরু হয়নি,
হঠাৎ করে তানিয়ার মনে হলো ফ্রেন্ড রিকোয়েস্টগুলো রিজেক্ট করার কথা,  
আসলে বয়েস বাড়ার সাথে সাথে ফ্রেন্ডলিস্টে আনার খুঁতখুঁতানিটা বেড়েছে ওর, তবুও তার মাঝেও অপরিচিত একটা মুখ, 'অঙ্কন গুপ্ত' ।
একবার দুবার রিজেক্ট করতে গিয়েও মনে হলো,না একসেপ্ট করেই নি।

হঠাৎ সেদিনই দুপুরে মেসেঞ্জার এ টিং টিং,
"অপরিচিতদের সাথে কথা বলা হয়?"
দিলো উত্তর।  
সেই থেকে সামান্য কথার সূত্রপাত,
অত্যন্ত সাধারণ কথোপকথন এর শুরু। 

অঙ্কন এক রুটিন মেইনটেইনেড মানুষ, 
রাত এগারোটায় ঘুমোয় আর ভোর পাঁচটায় তার সকাল,  
তাই দুপুরের সময়টুকুই বেঁচে ছিল ওদের জন্য,
ইন্টারন্যাশনাল ফোরাম এ কাজের দরুন 
তানিয়া যে নিশাচর। 

ওদের কথার মধ্যে 'আপনি' আলাদা মাত্রা এনেছিল, 
অঙ্কনের তুমিটা ঠিক পছন্দ না জানায়,  
আর বয়েস এ চার বছরের এর বড়ো হওয়ার দরুণ তুই টাও ঠিক পারছিলো না তানিয়া   
আপনিতেই মানিয়ে নিয়েছিলো ওরা। 

কিছুদিন পড়েই কথা বলতে ভালো লাগার স্বীকার করে অঙ্কন, এর মাঝেই নম্বর এর আদানপ্রদান,
ওই চায় প্রথম এ। 

রাত এগারোটা নাগাদ অঙ্কন যখন শুভরাত্রি বলে ঘুমোতে যেত তানির তখন পেটের দায়ে লড়াই এর শুরু,
ভোর পাঁচটায় হোয়াটস্যাপ এর টোন বেজে উঠতো তানিয়ার, 
ও তখন ক্লান্ত, 
সুপ্রভাত দিয়ে শুরু হতো সকালটা ওদের, 
সারা রাতের ক্লান্তির পরেও সাড়ে পাঁচটা নাগাদ অঙ্কনের কলটা আলাদা এনার্জি এনে দিতো ওকে, 
কানে হেডফোন, অপর প্রান্তে ও, 
হাতটা ল্যাপটপের কীবোর্ড এ। 
কিছু কথার মাঝে বেশ কিছুক্ষন চুপ থাকা,  শুধু নিশ্বাস এর শব্দ, 
-জানেন,একটানা এতক্ষন ফোন লাইন এ শেষ কবে থেকেছি মনে পরে না, বহু বছর পর এমনটা হচ্ছে। 
-সৌভাগ্যবতী তো আমি তাহলে, 
কিন্তু কথা তো কারোরই নেই তেমন। 
-হ্যাঁ হয়তো কথা না থেকেও অনেক কথা থাকার অনুভূতিটা ফোন টা রাখতে দেয়না। 
-কি যে বলেন। 

কাজ শেষ করে ঘুমোতে যাওয়া যখন তানিয়ার,
অঙ্কনের কাজের শুরু তখন। 

বেশ কয়েকদিন চলছিল, 
সারারাত কাজের পরে যখন ভোর হবে হবে তানিয়ার চোখটা চলে যেত মোবাইল এর স্ক্রিন এ, 
বেশ কিছুদিন প্রশ্ন ও করে ফেলে অঙ্কন,
"অপেক্ষা করছিলেন আমার?"
স্বাভাবিক ভাবেই মিথ্যেটাই বলতো তানি, 
"নাহ করিনি।"

ফোন থেকে একদিন এক বিকেলে সেটা পৌঁছলো ভিডিও কল এ, দেখা হলো দুজনের। 

ইয়ার্কি ফাজলামির মাঝে কথা,
ভালো লাগতো দুজনেরই দুজনের ভার্চুয়াল সঙ্গটা।

তার মাঝেই নিজেদের জীবনের কথা আদানপ্রদান,
অঙ্কনের জীবনের কিছু সম্পর্ক, 
বা বিদেশে কর্মরত থাকাকালীন পারিপার্শ্বিক সম্পর্কের কিছু গল্প। 
খানিক দুঃখ,খানিক অনুশোচনা। 
সেটা যখন ও শেয়ার করতো,
অবাক হতো তানিয়া, ভাবতো দেখে তো ওকে বুঝিনি। 
কিন্তু তারপর কেন জানিনা সেটাই কাছে টানলো ওকে,
সত্যিটা খুব প্রিয় তানিয়ার কাছে, 
যতই কঠিন হোক না কেন। 

কথার মাঝেই ওরা জানতে পারে দুজনেরই পাহাড় বড্ডো প্রিয়,
অঙ্কন বলে 
-যদি বন্ধুত্ব থাকে তবে একসাথে একদিন আমরা পাহাড়ে যাবো।
তানিয়া বলেছিলো 
-দেখা যাক।

দুজনের কর্ম ও পারিবারিক জীবনের  ব্যস্ততার মধ্যেও, একটা আলাদা সময় ছিল দুজনের জন্য।

হঠাৎ একদিন ভোর পাঁচটা তেইশ,
সুপ্রভাত এর সাথেই অঙ্কন বলে ফেললো,
-"নাম দেবেন এই সম্পর্কটার?"

ক্লান্তির মাঝেই তানিয়া চমকে উঠলো, 

-ভার্চুয়াল প্রেম বলছেন বুঝি? 
-ভার্চুয়ালটা রিয়েল হবে খুব শীঘ্রই। 
-ততদিনে যদি টানটা আলগা হয়ে যায়? 
-হবে না, মিলিয়ে নেবেন, 
আর বাকিটা সময়ই বলুক। 

তবে তানিয়া যে আর কোনো সম্পর্ক চায় না, যেটা আছে,
সেটা নামহীনই রাখতে চায় ও, 
এদিকে অঙ্কন আর নামহীন চায় না। 

আসলে ওদের দুজনের কাছেই নামহীন সম্পর্কের সংজ্ঞাটা সম্পূর্ণ আলাদা তাই শেষমেষ সিদ্ধান্ত হলো, 
সম্পর্কের নাম একজন দিক, 
আর একজনের কাছে নামহীন থাক,  
যে যেটায় ভালো থাকে, 
আর এর সাক্ষী শুধু দুজন,ওরা দুজন। 

দিন কাটলো,
এর মাঝে খানিক ঝগড়া, রাগ অভিমান ও নিজেদের দায়িত্বগুলো পালন করে নিচ্ছিলো, 
তানি বুঝছিলো ওর সাথে কথা না হলে একটা কষ্ট, ওর অনুপস্থিতিটার অনুভূতি,  
কিন্তু প্রকাশ করতে চায়নি সেটা। 

দিন যত এগোচ্ছে, 
ভার্চুয়াল জীবন এর প্রতি একটা অনীহা, 
পরিস্থিতি ও সাথ দিচ্ছিলো না,
 মনের তীব্র ইচ্ছে, 
একবার তাকে ছুঁয়ে দেখার,
বাস্তব জীবনে তার অস্তিত্বটা,
মোবাইলের স্ক্রিন এর বাইরে তার উপস্থিতিটা যে কতোটা কাঙ্খিত,
বোঝাতে পারছিলো না একে অপরকে,
একপ্রকার চায় ও নি বোঝাতে, 
দুর্বলতাটা প্রকাশ্যে আনতে চায়না যে কেউই। 

এসব এর মাঝেও কিছু কল্পনার শিকার হতো দুজনেই 
-আপনার সমুদ্র পছন্দ? 
-হ্যাঁ, ভালো লাগে তবে পাহাড় বেশি টানে। 
-কোথায় যেতে চান তাহলে? 
-ভেবে দেখিনি,শুধু সব বাধা কাটলে, পৃথিবীটা শান্ত হলে হারিয়ে যেতে চাই কিছুদিনের জন্য। 
-আমায় নেবেন সাথে?? 
-উমম, ভেবে দেখতে পারি। 

তানিয়ার নাম্বার ওর ফোনে ছিল 'খেয়া' নামে,
কারণ জানতে চাইলেও বলেনি কোনোদিনও। 
অঙ্কন মাঝে মধ্যে "ভালোবাসি খেয়া" বললেও তানিয়ার উত্তরে "হুম বুঝলাম" ছাড়া কিছুই শোনেনি ও। 
তবে অনুভূতি, দুর্বলতাটা যে এদিকে একইরকম, বোঝাতে চাইনি, তানিয়া। 
ওই যে চাপা ভয়টা বেশি ওর। 

দিন এগোতেই 
এই মোবাইল স্ক্রিন এ আর মন থাকছে না কারোর। 
কাজের সময় গুছিয়ে কে কার কাছে যাবে, কোথায় দেখা সম্ভব,
এসব পরিকল্পনাই হয় শুধু, 
আর তার মাঝে অনেকটা ঝগড়া।

-সামনে এলে যদি কথা বলার সাহস না পাই? ভয় পেয়ে চুপ হয়ে যাই যদি? 
-পাগলী, আমি বলাবো কথা,  চুপ হতেই দেবো না। 
তবে সবার আগে আপনার হাতটা শক্ত করে বেশ কিছুক্ষন ধরবো,  
দেবেন তো ধরতে? 
-হ্যাঁ, ভার্চুয়াল পেরিয়ে তোর যে একটা অস্তিত্ব আছে, বুঝতে হবে যে, আর সেটা বোঝার জন্য কি দরকার বলুন তো সবার আগে? 
-কি?  
-স্পর্শ, খানিক স্পর্শ। 

হঠাৎ করে তিনটে দিন কথা বন্ধ হয়ে গেলো ওদের , কিছুটা তানিয়াও দায়ী অবশ্য, 
ভেবেছিলো 
ভুল করছে হয়তো, এতটা জড়াবে না, আলাদা ভীতি কাজ করছিলো একটা
তার পাশাপাশি অঙ্কনের ছেলেমানুষি, অভিমান রাগ।

তবে তিনদিনেও ভেবে দেখলো, 
আর আটকাবে না নিজেকে, মন যেটা চায় সেটাই করবে এবারে। 

কথা হলো আবার।

ওই যে দুজনেই ভেবেছিলো দুজন দুজনকে সামনে যখন প্রথম দেখবে, জড়িয়ে ধরবে শক্ত করে, বেশ কিছুক্ষন। 
শুধু এই অনুভূতিটুকুর জন্য, 
মোবাইল স্ক্রিন এর বাইরেও ওরা  আছে দুজনের জন্য। 
ভেবেছিলো দুজনেই, প্রকাশ করার সাহস পায়নি শুধু। 

এমন একটা সম্পর্কে জড়াচ্ছিলো , 
যেটার কোনো অতীত নেই,
নেই কোনো ভবিষ্যত পরিকল্পনা। 
শুধু আছে বর্তমানের প্রতিটা মুহূর্তের মাঝে ওদের দুজনের ভালো থাকা, হ্যাঁ শর্ত ওদের এটাই। 
ভালো থাকতে হবে দুজনকেই। 
এর কোনো শুরু নেই,  
শেষ ও নেই। 
হয়তো আজ আছে কাল কেউই থাকবে না,  তবে আজটুকু আবেগটুকুই গুরুত্বপূর্ণ। 

১২ ই জুলাই, 
প্রথম সাক্ষাৎ হলো ওদের,  
সাড়ে চার মাসের ভার্চুয়াল কোয়ারেন্টাইন প্রেম থেকে বেরিয়ে প্রথম স্পর্শ হলো সেদিন। 

বেশ কিছুদিন ধরেই তানিয়ার মনটা বড্ডো অস্থির, 
খুব আনচান করছে, কাজে মন নেই, অদ্ভুত একটা অনুভূতি, যেটা নিজেই নিজেকে বোঝাতে পারছিলো না।
১২ই জুলাই সকাল থেকে সেটাই তীব্র, 
তার ওপর অঝোর ধারায় বৃষ্টি সেটাকে এক অন্য পর্যায়ে নিয়ে গেছে।

রাত এগারোটায় ঘুমিয়ে পড়ার অভ্যেস থেকেও অঙ্কন বিরত,গত রাত থেকে প্রায় জেগেই কেটেছে ওর। 

শ্যামবাজার মোড়ে বিকেল চারটে তে দেখা হবে ওদের, 

অদ্ভুত এক ভীতি কাজ করছে তানিয়ার মনে,  
এটা কেমন সাক্ষাৎ? 
সম্পর্কের শুরু এভাবে হয়? 
খুব ভুল কিছু করে ফেলছে না তো?
নিজেকে ব্যস্ত রেখে মনটাকে আশ্বাস দিচ্ছিলো শুধু ও নিজে।

তখন ঠিক পৌনে চারটে, শ্যামবাজার নেমেই অঙ্কনকে ফোন । একটা স্টপেজ এগিয়ে গেছিলো তানিয়া ভুল করে, নেমে খানিক  পিছিয়ে আসে ও,
দূর থেকে দেখে, সে আসছে। 
সামনে এসে প্রথমে বেশ কিছু মুহূর্ত চুপ ছিল তানি,   
-কোথায় যাবি বল? ক্যাব বুক করছি। 
-যেখানে হোক। 
-চল তবে। 

হ্যাঁ সামনে তখন আপনি টা তুই তে পরিণত হয়েছে ওদের। 

গাড়ি এলো, উঠলো। 
চার মাস পর বৃষ্টি ভেজা শহরটাকে দেখছিল তানিয়া, শহরটার প্রতি আলাদা অনুভূতি ভালোবাসা ওর বরাবরই, 
তার ওপর পাশে সে, যে নতুন ওর কাছে,  যাকে চেনে এই তো ঠিক সতেরো মিনিট আগে থেকে,
তবুও মনে হচ্ছিলো বহু দিনের চেনা সে। 
একটা অনুভূতি, 
সাময়িক কিনা জানেনা,
তবে মনের ভেতর হচ্ছিলো ওর  
কিছু একটা। 
মুখটা ঘুরিয়ে রেখেছিলো জানলার দিকে। 

হঠাৎ হাতটা ওর হাতের ওপর রাখলো অঙ্কন,
প্রথম স্পর্শ, প্রথম ছোঁয়া।
গত চার মাস যেটার জন্য অপেক্ষা করেছে, তানিয়াও পারলো না নিজের আবেগ কে আটকাতে,  
শক্ত করে ধরে ফেললো, আঁকড়ে,
তবে ওর মুখটা তখনও জানলার দিকে,
অঙ্কন কানের কাছে এসে 
হালকা করে তানিয়ার চুল টা সরিয়ে বললো বললো, 
-"আর ভার্চুয়াল বলবি?"
আলতো করে ঘাড় নাড়ল তানিয়া,
চোখে জল, 
সেই অনুভূতিটা বেরিয়ে আসছে যেটাকে চেয়েও ও আর আটকাতে পারছে না। 

ময়দানের মাঠের পাশে ক্যাব টা দাঁড় করিয়ে নামলো দুজনে, বৃষ্টি কমেছে তখন। 

সারা পৃথিবী জুড়ে দূরত্ব বজায় রাখুন এর মাঝে বেখেয়ালি ভাবে মিশে যেতে ইচ্ছে করছিলো একে অপরের সাথে, 
-কিছু বলবি না খেয়া? 
-হ্যাঁ অনেক কিছু, তবে পারছি না। 
এমন টা হয়নি তো আগে, lকিরম একটা অদ্ভুত লাগছে। 
-সত্যিই বলতে আমারো এমনটা প্রথম জানিস। 
-উমম হতে পারে না, সম্পর্ক ছিল যে এতো? 
-হুম সে অতীত নিয়ে তুই চরিত্রে দাগ কাটতেই পারিস, তবুও এমনটা প্রথম সত্যিই।
এই বৃষ্টি, কলকাতা, ভেজা মাটি, সাথে তুই, 
এমন অভিজ্ঞতা প্রথম। 
-ভেবেছিলি কোনোদিন এমনটা? 
-ভার্চুয়ালি দেখলাম যেদিন প্রথম,
 সত্যিই ভাবিনি, সবটাই হঠাৎ। 
-আমার কাছেও।

খানিক চুপ দুজনে, ফাঁকা মহানগরীর মাঝে অঙ্কনের কাঁধে মাথাটা রেখে ঘনিষ্ঠ তারা, 
দূরত্ব মানেনি।

এই সম্পর্কের কি পরিণতি, ওরা জানেনা,  
তবুও ছিল সীমাহীন আবেগ আর স্পর্শ। 

 স্পর্শ সম্পর্কটাকে কতোটা গভীর করে দিতে পারে, সেটা বুঝেছিলো সেদিন দুজনে,দুজনেই। 



সায়ন্তনী বোস

Wednesday 10 June 2020

ছলনা


   
                     

সখী-
তোমার মান
প্রাণে'র অনুপান।
প্রণয়বেদে-মাত্রা সঠিক করে জীবনদান।

খল-নুড়ি'তে জীবন কাটাই আহ্লাদে খানখান।

সখী-
তোমার রোষ
সন্ধি'র জয়ঘোষ।
ছোবলটুকু'র অন্তরালে ভয় ধরানো ফোঁস।

দুখবিলাসী সুখ কুড়োবে দিয়ে আমায় দোষ।
                            ---

Sunday 7 June 2020

ইচ্ছে

পথেই যে দেখা হবে ভাবিনি আগে
শেষের শুরু এই পথই পড়বে শপথ
হিসেবের শেষ অঙ্কটা মিলবেই মিলবে
পরিযায়ীর রক্ত মেখে উড়বে কপোত। 

ফেলে যাওয়া রুটি শুঁকছে হাওয়া 
হলোনা তার এবার পাকস্থলীতে যাওয়া 
শিল্পের পাটাতনে শিল্পীর জীবন দেওয়া 
লজ্জায় ভোরের শিশির ফেলেছিল জল দু'ফোটা।
সংসদের দেওয়ালে আছে এখনো নিপুণ হাতের ছোঁয়া
মজদুরের পথ  মিলিয়েছে  জাত ধর্মের একসাথে চলা।

শিল্পীর শ্রমকে কে কবে আর দাম দিয়েছে? 
বৃদ্ধাঙ্গু্ষ্ঠ এখনো কৈফিয়ত চাইছে তাজের মিনারে।
পথের দাবীকে সাথে নিয়ে করি আহবান 
সামনের কঠিন পথ হোক আরো ম্রিয়মান
তোমার বলিষ্ঠ পদযুগলে রইলো সশ্রদ্ধ প্রণাম।। 


Saturday 6 June 2020

কি করবি কর্!!!




                           

"----কি করবি কর্!!  আমার দুর্বল জায়গাটা আমি তালুকদারে'র ডোবায় ধুয়ে এলাম। রক্ত সমেত। এসব নিয়ে চিন্তা নেই। ও তো আবার কয়েকদিনেই যেমন কে তেমন। তোর খুশফহমী'র বুকে এবার ছুরিকাঘাতের ব্যবস্থা করব। খাওয়া হারামী সতের দিনের বাচ্চাকে দুধ!! দিক ভগবান তোকে সেই ক্ষমতা! তোর লোমশ পুরুষস্তন জুড়ে নামুক অমৃতের ঢল!! বংশের নাম রাখবে যে, তাকে পালতে পারার যোগ্যতা তোর নেই। তাহলে আবার 'আমার- আমার' কিসের? আরে! এ জ্বালা নাকি তোর মাও সয়েছে, দেখলি না? তোর সামনেই তো বলল! তাহলে কি ধরে নেব, পুরুষের বীর্যে নষ্ট আপোষহীন অবিবেকী চরিত্র লুকানো থাকে? যেমন তোর মধ্যেও বর্তমান? নাকি শুধু এখানেই এটা? এই পরিবারে? আসলে, এই একটাই হাতিয়ার তোদের কাছে আছে, ব্যথা দেওয়ার ক্ষমতা। জান্তব জিঘাংসা নিয়ে নখ দন্ত সহযোগে পেটিকোটের উপরই তোরা বীরত্ব ফলিয়ে শ্রেষ্ঠত্ব প্রমানিত করবি। সহ্যের শক্তি তোর চাইতে আমার কম নাকি? এবার শালা, ঠিকই করে নিয়েছি, তোর এ বেলেল্লেপনা মানবো না। যখন পুনর্মুশিকো ভবঃ আমার বরদান- তখন ঘেয়ো কুকুরের মতো পেছন পেছন তুই ঘুরবি! আর সতীত্ব??  ওসব ছেদো কথা রাখ! ওটা আজকাল ভোঁতা হাতিয়ার, আসল হল - 'দম'- মর্দানগী, যেটা তোর থেকে বেশীই আছে আমার।  ঢ্যামনা! যখন গরম কড়াই খালি হাতে নামাই, গরম ফ্যান পায়ে পড়লে উফ্ করি না, ফিরতি ধোঁয়ায় দম বন্ধ হতে থাকলেও  উনুনে ফুঁ মেরে খ্যাটনের জোগাড় করি, সারারাত জেগে বাচ্চা হাগিয়ে সকালে ডোবায় সেই গুয়ের কাঁথা ধুয়ে আনি এই কঠিন শীতে, তখন মনে হয়, যদি তোকে ঐ বুড়িটা দশ মাস দশ দিন পেটেই না রাখতো, তবে তোর এত চাবোর চোবোর ফুটানির কি হত!! সত্যিটা নিতে পারবি না, নেওয়ার মতো সৎ সাহস নেই। আমাদের রক্ত-রসেই তোদের পুষ্টি, তবু শালা বে-বোধ বলিস, বুদ্ধু বানাস। কয়েকটা বিশেষ দিন দিয়ে কৃতার্থ করার চেষ্টা-- এ শালা তোর নষ্টা রাজনীতি। নিলাম না। আজ থেকে তুই 'দ' হবি, হাঁটু ভেঙে বসবি, নতজানু যাকে বলে- আমি আত্মতুষ্ট হব, দেখব- তুই সৎ-এর পরীক্ষা দিচ্ছিস-- প্রতি ক্ষণ, প্রত্যেক মূহুর্তে, শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত দেখব- ""ঊরু ভাঙি কুরুরাজ পড়িলা ভূতলে'''''...... "
           "----আর হ্যাঁ, পেটে ধরব। তবে তোর যোগ্যতা প্রমানিত হওয়ার পর। সম্ভোগ করব - নিজের আত্মতৃপ্তির জন্য। অদেখা লুক্কায়িত মমতা, প্রেম স্বেচ্ছায় বের করব নিক্তি মেপে, তুই জানিস, মানিস না। এবার মানাবো তোকে। পুড়িয়ে মারবি? এবার সহমরনের পালা তোর- তোর- তোর....."
            স্ক্রীপ্ট থেকে মুখ তুলে দেখি মেঘা উৎকন্ঠিত তাকিয়ে আছে। বেশ টান টান সাহসী কলম। প্রভা প্রকাশনী'র উপযুক্তই। ম্যাদামারা প্রেম এখানে'র ট্র্যাডিশন ছিল না কোনদিনই। এবার লেখক নাড়াচাড়া'র পালা।
'--- মন্দ নয়! কতদিন লিখছেন?
'-- প্রায় আট বছর। আসলে, লিখলেই তো হয় না! ছাপানো'র জন্য ট্যাঁকের জোরও দরকার। সেটিই জোগাড় করে ওঠা যায় নি। তাই....'
'--- এখানেও অর্ধেকটা আপনাকেই বেয়ার করতে হবে, তা জানেন তো!'
'--- সে ভরসাতেই এসেছি। যদি অর্ধেকটা দিয়েও এটার একটা হিল্লে হয়!' ম্যানুস্ক্রীপ্টটা নিজের দিকে টেনে নিলেন লেখক মহোদয়। একটু সামনে ঝুঁকে শঙ্কিত প্রশ্ন-
'-- তা, কতো পরবে, অর্ধেকে?'
                  চকিতে চশমা'র ফাঁক দিয়ে মেঘা'কে দেখলাম। সারা চোখ মুখে দুষ্টুমি খেলছে অথচ কতো ভান ঔদাসীন্যের!!
'-- কেন? ম্যামে'র সাথে কথা হয় নি?'
'-- হ্যাঁ, হয়েছে। উনি তো বত্রিশের নিচে হবে না পরিস্কার বললেন। কতো কাজ করতে হবে এটায়, সেটাও শোনালেন। আমার কাছে তো অতো নেই! আমি আঠাশ অব্দি দিতে পারবো। নিয়েই এসেছি, বললে- এখনই দিয়ে যাই।'
               হিসেবটা তো ম্যানুস্ক্রীপ্টের সাথেই মাথায় বসে গেছিল। সওদা মন্দ নয়। তবে বাকিটাও গুছিয়ে নেওয়া প্রয়োজন। বই কাটবে, সন্দেহ নেই। আগাম বাজারটা সেটিং করে রাখা দরকার। নিজেকে পুশ ব্যাকে হেলিয়ে পেশাদারিত্ব আনলাম--
'--- দিয়ে যান ওনার কাছে, টাকা, স্ক্রীপ্ট, দুটোই, ও রসিদ দিয়ে দেবে। বই বিক্রী'র পর অর্ধেক টাকা যতদিন আমরা সম্পূর্ণ না পাচ্ছি, ততদিন আপনি কোন টাকাই পাচ্ছেন না, এটা আগাম জানিয়ে রাখলাম, দরকার হলে বলুন, কাগজ তৈরি করে নেওয়া যাক।
'-- না, তার দরকার হবে না। আসলে মেয়েটা আমায় বড্ডো ভালোবাসতো। দৈব দুর্বিপাকে বিয়েটা অন্য জায়গায় হ'ল, অকালে চলেও গে'ল, ওরই কাহিনী এটা। তাই পাঠকে'রা পড়লেই হবে। আমার আর বিশেষ কিছু চাওয়ার নেই। আচ্ছা, আসি, নমস্কার।'
'-- নমস্কার।'
        মেঘা দ্যুতি ছড়িয়ে পার্টিকে নিয়ে বেড়িয়ে গেল। ব্যর্থ প্রেমিকের বলিষ্ঠ রচনা, মাছের তেলেই মাছটা ভেজে ফেলা গেল। পঁচিশ খরচ, আঠাশ এখনই প্রাপ্তি। বই বেচা এখনো বাকি, নট ব্যাড!! নারীবাদী প্রকাশনা'র দুর্নামটা কখনো কখনো পেটটা একটু বেশীই ভরিয়ে দেয়। ফিল্টার উইলসের প্যাকেট'টার দিকে আমার হাতটা অনায়াসেই চলে গেল।
                       *****

রিম্পা বিশ্বাসের কলমে